ইসরা-মিরাজের হাদিসগুলোতে নবীদের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানের ব্যাপারে কি পরস্পবিরোধী তথ্য আছে?
অভিযোগঃ
ইসলামবিরোধীরা দাবি করে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর ইসরা-মিরাজ সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে বিভিন্ন স্থানে অন্য নবীদের(আ.) অবস্থানের ব্যাপারে পরস্পবিরোধী তথ্য আছে। এই দাবির স্বপক্ষে তারা যেসব হাদিস পেশ করে—
হাদিস নং ১ :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَتَيْتُ - وَفِي رِوَايَةِ هَدَّابٍ مَرَرْتُ - عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمَرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ "
অর্থঃ “আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে রাতে আমার মি’রাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মূসা (আ.) এর পাশ দিয়ে গেলাম। লাল বালূকা স্তূপের কাছে তাঁর কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।” [1]
হাদিস নং ২ :
ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ فَقِيلَ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ . قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ فَرَحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ . ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ . فَقِيلَ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ . قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِابْنَىِ الْخَالَةِ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّاءَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمَا فَرَحَّبَا وَدَعَوَا لِي بِخَيْرٍ . ثُمَّ عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ . فَقِيلَ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم . قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِيُوسُفَ صلى الله عليه وسلم إِذَا هُوَ قَدْ أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ . ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الرَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ . قَالَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِدْرِيسَ فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا) ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ الْخَامِسَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ . قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ . قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِهَارُونَ صلى الله عليه وسلم فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ . ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ . قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ . قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى صلى الله عليه وسلم فَرَحَّبَ وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ . ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ فَقِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم . قِيلَ وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ قَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ . فَفُتِحَ لَنَا فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ صلى الله عليه وسلم مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ
অর্থঃ “… তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দ্বার খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আঃ) এর দেখা পাই তিনি আমাকে মুবারাকবাদ জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে উর্ধ্বলোক নিয়ে চললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, তাকে কি আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ) দুই খালাত ভাইয়ের দেখা পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে ইউসুফ (আঃ) এর দেখা পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে ইদরীস (আঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়" (সূরাহ আল হাদীদ ৫৭ : ১৯)।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে?” তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে হারূন (আঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে ইবরাহীম (আঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি বাইতুল মামুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন।...” [2]
হাদিস নং ৩ :
، أَنَّهُ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَسْجِدِ الْكَعْبَةِ أَنَّهُ جَاءَهُ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ وَهْوَ نَائِمٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ،
…
ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَضَرَبَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِهَا فَنَادَاهُ أَهْلُ السَّمَاءِ مَنْ هَذَا فَقَالَ جِبْرِيلُ. قَالُوا وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مَعِي مُحَمَّدٌ. قَالَ وَقَدْ بُعِثَ قَالَ نَعَمْ. قَالُوا فَمَرْحَبًا بِهِ وَأَهْلاً. فَيَسْتَبْشِرُ بِهِ أَهْلُ السَّمَاءِ، لاَ يَعْلَمُ أَهْلُ السَّمَاءِ بِمَا يُرِيدُ اللَّهُ بِهِ فِي الأَرْضِ حَتَّى يُعْلِمَهُمْ، فَوَجَدَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا آدَمَ فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ هَذَا أَبُوكَ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ. فَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَرَدَّ عَلَيْهِ آدَمُ وَقَالَ مَرْحَبًا وَأَهْلاً بِابْنِي، نِعْمَ الاِبْنُ أَنْتَ. فَإِذَا هُوَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا بِنَهَرَيْنِ يَطَّرِدَانِ فَقَالَ مَا هَذَانِ النَّهَرَانِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا النِّيلُ وَالْفُرَاتُ عُنْصُرُهُمَا. ثُمَّ مَضَى بِهِ فِي السَّمَاءِ فَإِذَا هُوَ بِنَهَرٍ آخَرَ عَلَيْهِ قَصْرٌ مِنْ لُؤْلُؤٍ وَزَبَرْجَدٍ فَضَرَبَ يَدَهُ فَإِذَا هُوَ مِسْكٌ قَالَ مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ الَّذِي خَبَأَ لَكَ رَبُّكَ. ثُمَّ عَرَجَ إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَقَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَتْ لَهُ الأُولَى مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ. قَالُوا وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم. قَالُوا وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ. قَالُوا مَرْحَبًا بِهِ وَأَهْلاً. ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ وَقَالُوا لَهُ مِثْلَ مَا قَالَتِ الأُولَى وَالثَّانِيَةُ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى الرَّابِعَةِ فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الْخَامِسَةِ فَقَالُوا مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ عَرَجَ بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، كُلُّ سَمَاءٍ فِيهَا أَنْبِيَاءُ قَدْ سَمَّاهُمْ فَأَوْعَيْتُ مِنْهُمْ إِدْرِيسَ فِي الثَّانِيَةِ، وَهَارُونَ فِي الرَّابِعَةِ، وَآخَرَ فِي الْخَامِسَةِ لَمْ أَحْفَظِ اسْمَهُ، وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّادِسَةِ، وَمُوسَى فِي السَّابِعَةِ بِتَفْضِيلِ كَلاَمِ اللَّهِ،
…
قَالَ وَاسْتَيْقَظَ وَهْوَ فِي مَسْجِدِ الْحَرَامِ
অর্থঃ “আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী ﷺ এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন।
...
তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ ﷺ। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না। দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আ.) কে পেলেন। জিবরীল (আ.) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী ﷺ তাঁকে সালাম দিলেন। আদম (আ.) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী ﷺ দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আ.) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল। এরপর জিবরীল (আ.) নবী ﷺ কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী ﷺ নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আ.) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন। তারপর তিনি নবী ﷺ কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তাঁরা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ ﷺ। তাঁরা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান। তারপর নবী ﷺ কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাঁকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী ﷺ কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাঁকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী ﷺ তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আ.), চতূর্থ আসমানে হারুন (আ.), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আ.) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আ.) আছেন সপ্তম আসমানে।
...
এ সময় নবী ﷺ জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।” [3]
আমরা দেখলাম –
১ম হাদিসে উল্লেখ আছে যে মুসা(আ.) তাঁর কবরে নামাজ পড়ছিলেন।
২য় হাদিসে উল্লেখ আছে – ১ম আসমানে আদম(আ.), ২য় আসমানে ঈসা(আ.) ও ইয়াহইয়া(আ.), ৩য় আসমানে ইউসুফ(আ.), ৪র্থ আসমানে ইদ্রিস(আ.), ৫ম আসমানে হারুন(আ.), ৬ষ্ঠ আসমানে মুসা(আ.) এবং ৭ম আসমানে ইব্রাহিম(আ.) অবস্থান করছিলেন।
৩য় হাদিসে উল্লেখ আছে – ১ম আসমানে আদম(আ.), ২য় আসমানে ইদ্রিস(আ.), ৪র্থ আসমানে হারুন(আ.), ৬ষ্ঠ আসমানে ইব্রাহিম(আ.) এবং ৭ম আসমানে মুসা(আ.) অবস্থান করছিলেন।
ইসলামবিরোধীদের অভিযোগ হল - এক হাদিসে মুসা(আ.) কর্তৃক কবরে নামাজ পড়ার বর্ণনার সঙ্গে অন্যান্য হাদিসে তাঁর আসমানে অবস্থানের বর্ণনা সাংঘর্ষিক।
আবার ২য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম আসমানে কোন কোন নবী অবস্থান করছিলেন এই প্রসঙ্গেও হাদিসের বর্ণনা পরস্পরবিরোধী।
জবাবঃ
নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর ইসরা-মিরাজ জাগ্রতভাবে হয়েছিল, নিঃসন্দেহে তিনি সশরীরে সেই সফর করেছিলেন। কিন্তু নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর সঙ্গে অন্য যে নবীদের(আ.) সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেখানে তাঁদের রূহ বা আত্মা ছিল। তাঁরা শারিরীকভাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। বরং তাঁদের দেহ অবিকৃতভাবে তাঁদের কবরসমূহে অবস্থান করছে। [4] আর আত্মার চলাচল বা গতি মোটেও শারিরীক দেহের মতো নয় বরং তা নিমিষের মাঝে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করতে পারে, যেরূপে ফেরেশতাগণ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারেন। এই প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া(র.) বলেছেন,
وَمِمَّا يُشْبِهُ هَذَا إخْبَارُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا رَآهُ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ مِنْ الْأَنْبِيَاءِ فِي السَّمَوَاتِ وَأَنَّهُ رَأَى آدَمَ وَعِيسَى وَيَحْيَى وَيُوسُفَ وَإِدْرِيسَ وَهَارُونَ وَمُوسَى وَإِبْرَاهِيمَ صَلَوَاتُ اللَّهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِمْ وَأَخْبَرَ أَيْضًا أَنَّهُ رَأَى مُوسَى قَائِمًا يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ؛ وَقَدْ رَآهُ أَيْضًا فِي السَّمَوَاتِ. وَمَعْلُومٌ أَنَّ أَبْدَانَ الْأَنْبِيَاءِ فِي الْقُبُورِ إلَّا عِيسَى وَإِدْرِيسَ. وَإِذَا كَانَ مُوسَى قَائِمًا يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ ثُمَّ رَآهُ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ مَعَ قُرْبِ الزَّمَانِ؛ فَهَذَا أَمْرٌ لَا يَحْصُلُ لِلْجَسَدِ. وَمِنْ هَذَا الْبَابِ أَيْضًا نُزُولُ الْمَلَائِكَةِ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ وَسَلَامُهُ: جِبْرِيلَ وَغَيْرِهِ.
অর্থঃ “এ ধরনের বিষয়গুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলো—রাসুলুল্লাহ ﷺ মিরাজের রাতে আসমানসমূহে যেসব নবীদের(আ.) দেখেছেন সে সম্পর্কে তাঁর সংবাদ প্রদান। তিনি দেখেছেন—আদম, ঈসা, ইয়াহইয়া, ইউসুফ, ইদ্রিস, হারুন, মুসা ও ইব্রাহিমকে (তাঁদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক)। তিনি আরও সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি মুসা(আ.)কে তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেখেছেন; আবার তিনিই মিরাজের রাতে আসমানসমূহেও তাঁকে দেখেছেন। এটি জানা বিষয় যে নবীদের দেহসমূহ তাঁদের কবরেই থাকে—ঈসা(আ.) ও ইদ্রিস(আ.) ব্যতিত। আর যদি মুসা(আ.) কবরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েন, তারপর অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁকে ৬ষ্ঠ আসমানেও দেখা যায়—তবে এটি এমন বিষয় যা দেহের ক্ষেত্রে সম্ভব নয় [আত্মার ক্ষেত্রে সম্ভব]। এই ধরনের বিষয়াবলীর মধ্যে ফেরেশতাদের (তাঁদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক) অবতরণও অন্তর্ভুক্ত, যেমন জিবরাঈল(আ.) এবং অন্যান্য ফেরেশতাগণ।” [5]
ইসরা-মিরাজের রাতে মুসা(আ.) কোথায় ছিলেনঃ তাঁর কবরে, নাকি আসমানে - এই প্রশ্নের উত্তরে ইমাম নববী(র.) এর ‘শারহ মুসলিম’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে –
قَالَ الْقَاضِي فَإِنْ قِيلَ كَيْفَ رَأَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ وَصَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْأَنْبِيَاءِ بِبَيْتِ المقدس ووجدهم على مراتبهم فى السماوات وَسَلَّمُوا عَلَيْهِ وَرَحَّبُوا بِهِ فَالْجَوَابُ أَنَّهُ يُحْتَمَلُ أَنْ تَكُونَ رُؤْيَتُهُ مُوسَى فِي قَبْرِهِ عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ كَانَتْ قَبْلَ صُعُودِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى السَّمَاءِ وَفِي طَرِيقِهِ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ وَجَدَ مُوسَى قَدْ سَبَقَهُ إِلَى السَّمَاءِ
অর্থঃ “কাযি [ইয়ায(র.)] বলেছেন, যদি বলা হয়ঃ কিভাবে তিনি মুসা(আ.)-কে তাঁর কবরে সালাত আদায় করতে দেখলেন, অথচ নবী (ﷺ) বায়তুল মাকদিসে অন্যান্য নবীদের সাথে সালাত আদায় করলেন এবং তাঁদেরকে তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী আসমানে পেলেন, এবং তাঁরা তাকে সালাম ও স্বাগত জানালেন?
এর জবাব হলো, লাল বালিয়াড়ির কাছে কবরে মুসা (আ.)-কে দেখাটা সম্ভবত নবীর (ﷺ) আসমানে আরোহণের আগে এবং বায়তুল মাকদিসে যাবার পথে হয়েছিল। তারপর তিনি মুসা(আ.)-কে আসমানে তাঁর আগে পৌঁছাতে দেখতে পেলেন।” [6]
অর্থাৎ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) বাইতুল মাকদিসে যাবার পথে মুসা(আ.)এর আত্মাকে তাঁর কবরে নামাজরত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন। এরপর বাইতুল মাকদিস ও আসমানে পুনরায় মুসা(আ.)কে দেখতে পাবার কারণ হল মুসা(আ.) এর আত্মার পক্ষে দ্রুত সেসব জায়গায় পৌঁছা সম্ভব ছিল। কাজেই এই হাদিসগুলো পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়।
এবার ২য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম আসমানে কোন কোন নবী অবস্থান করছিলেন, এই প্রসঙ্গে আসি।
উপরে উল্লেখিত ৩য় হাদিসের শব্দাবলির মাঝে লক্ষনীয় যে, সেখানে হাদিসের একদম শুরুতেই উল্লেখ আছে – “নবী ﷺ এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। ”
আবার হাদিসটির একদম শেষাংশে উল্লেখ আছেঃ “এ সময় নবী ﷺ জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।”
হাদিসের এই শব্দাবলির কারণে অনেক মুহাদ্দিসের মতেঃ যদিও সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় নবী ﷺ এর ইসরা-মিরাজ প্রমাণিত, কিন্তু এই হাদিসের ঘটনাগুলো ঘটেছে নবী ﷺ এর স্বপ্নে। অর্থাৎ নবী ﷺ এর জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে যেমন ইসরা-মিরাজ হয়েছে, এর পূর্বে তাঁর স্বপ্নেও তা ঘটেছিল। আর এই হাদিসে তাঁর স্বপ্নে ঘটা মিরাজের বিবরণ আছে। তাই আসমানে নবীদের অবস্থানসহ কিছু জায়গার বিবরণে অন্য হাদিসের বিবরণের সাথে অর্থাৎ জাগ্রত অবস্থার মিরাজের বিবরণের সাথে পার্থক্য আছে। ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, একবার সশরীরে (জাগ্রত অবস্থায়) মিরাজের পুর্বে স্বপ্নে আরেকবার ইসরা-মিরাজ ঘটা অসম্ভব নয়। কারণ অন্যত্র হাদিসে উল্লেখ আছে মুহাম্মাদ ﷺ নবুয়ত লাভের পূর্বে স্বপ্নে যা দেখতেন তা বাস্তবে পরিণত হতো। আর এভাবেই ওহী লাভের সূচনা হয়েছিল। [7] সালাফদের থেকেও এই মত বর্ণিত আছে। তবে একাধিকবার সশরীরে (জাগ্রত অবস্থায়) ইসরা-মিরাজ ঘটা সম্ভব নয়। ইবন হাজার আসকালানী(র.) এর নিজ ভাষ্য নিম্নরূপ—
فَجَنَحَ لِأَجْلِ ذَلِكَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْهُمْ إِلَى أَنَّ ذَلِكَ كُلَّهُ وَقَعَ مَرَّتَيْنِ مَرَّةً فِي الْمَنَامِ تَوْطِئَةً وَتَمْهِيدًا، وَمَرَّةً ثَانِيَةً فِي الْيَقَظَةِ كَمَا وَقَعَ نَظِيرُ ذَلِكَ فِي ابْتِدَاءِ مَجِيءِ الْمَلَكِ بِالْوَحْيِ، فَقَدْ قَدَّمْتُ فِي أَوَّلِ الْكِتَابِ مَا ذَكَرَهُ ابْنُ مَيْسَرَةَ التَّابِعِيُّ الْكَبِيرُ وَغَيْرُهُ أَنَّ ذَلِكَ وَقَعَ فِي الْمَنَامِ، وَأَنَّهُمْ جَمَعُوا بَيْنَهُ وَبَيْنَ حَدِيثِ عَائِشَةَ بِأَنَّ ذَلِكَ وَقَعَ مَرَّتَيْنِ.
وَإِلَى هَذَا ذَهَبَ الْمُهَلَّبُ شَارِحُ الْبُخَارِيِّ وَحَكَاهُ عَنْ طَائِفَةٍ وَأَبُو نَصْرِ بْنِ الْقُشَيْرِيِّ وَمِنْ قَبْلِهِمْ أَبُو سَعِيدٍ فِي شَرَفِ الْمُصْطَفَى قَالَ: كَانَ لِلنَّبِيِّ ﷺ مَعَارِيجُ، مِنْهَا مَا كَانَ فِي الْيَقَظَةِ وَمِنْهَا مَا كَانَ فِي الْمَنَامِ، وَحَكَاهُ السُّهَيْلِيُّ، عَنِ ابْنِ الْعَرَبِيِّ وَاخْتَارَهُ، وَجَوَّزَ بَعْضُ قَائِلِي ذَلِكَ أَنْ تَكُونَ قِصَّةُ الْمَنَامِ وَقَعَتْ قَبْلَ الْمَبْعَثِ لِأَجْلِ قَوْلِ شَرِيكٍ فِي رِوَايَتِهِ عَنْ أَنَسٍ وَذَلِكَ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ،
... ... ...
وَإِنَّمَا الْمُسْتَبْعَدُ وُقُوعُ التَّعَدُّدِ فِي قِصَّةِ الْمِعْرَاجِ الَّتِي وَقَعَ فِيهَا سُؤَالُهُ عَنْ كُلِّ نَبِيٍّ وَسُؤَالُ أَهْلِ كُلِّ بَابٍ هَلْ بُعِثَ إِلَيْهِ، وَفَرْضُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَغَيْرِ ذَلِكَ؛ فَإِنَّ تَعَدُّدَ ذَلِكَ فِي الْيَقَظَةِ لَا يُتَّجَهُ، فَيَتَعَيَّنُ رَدُّ بَعْضِ الرِّوَايَاتِ الْمُخْتَلِفَةِ إِلَى بَعْضٍ، أَوِ التَّرْجِيحُ إِلَّا أَنَّهُ لَا بُعْدَ فِي جَمِيعِ وُقُوعِ ذَلِكَ فِي الْمَنَامِ تَوْطِئَةً ثُمَّ وُقُوعُهُ فِي الْيَقَظَةِ عَلَى وَفْقِهِ كَمَا قَدَّمْتُهُ.
অর্থঃ “একারণে কিছু আলেম এই মতের দিকে ঝুঁকেছেন যে, এই পুরো ঘটনাটি দু'বার সংঘটিত হয়েছিল - একবার স্বপ্নে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে, এবং দ্বিতীয়বার জাগ্রত অবস্থায়। ঠিক যেমন ওহী নিয়ে ফেরেশতার আগমনের শুরুতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। আমি এই গ্রন্থের [ফাতহুল বারী] শুরুতে বর্ণনা করেছি যে, বড় মাপের তাবিঈ ইবন মায়সারা(র.) ও অন্যান্যরা কী বলেছেন। [তাঁরা বলেছেন] যে এটি স্বপ্নে সংঘটিত হয়েছিল, এবং তাঁরা এটি ও আয়িশা (রা.)-এর হাদিসের মধ্যে সমন্বয় করেছেন এভাবে যে ঘটনাটি [মিরাজ] ২ বার সংঘটিত হয়েছিল।
এ মত সমর্থন করেছেন বুখারীর ব্যাখ্যাকারক মুহাল্লাব (র.)। তিনি এই মতকে একদল আলেমের অনুগামীদের মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু নাসর ইবনুল কুশাইরি(র.) এবং তাঁদের পূর্বে আবু সাঈদ(র.) ‘শারাফুল মুস্তফা’ গ্রন্থে বলেছেনঃ “নবী ﷺ–এর একাধিক মিরাজ ছিল—এর কিছু জাগ্রত অবস্থায় এবং কিছু স্বপ্নে।” সুহাইলী(র.)ও ইবনুল আরাবীর(র.) কাছ থেকে এটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনিও এ মতটি সমর্থন করেছেন। এ মত গ্রহণকারীদের কেউ কেউ বলেছেন—স্বপ্নের ঘটনাটি নবুয়ত লাভের পূর্বে ঘটে থাকতে পারে; কেননা শারীক তাঁর আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করেছেনঃ “নবী ﷺ এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে (তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল)...”।
... ... ...
মিরাজের কাহিনীতে যেখানে প্রত্যেক নবী কর্তৃক তাঁর [মুহাম্মাদ ﷺ] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা, প্রত্যক দরজার রক্ষীদের কর্তৃক তাঁকে [তাঁদের নিকট] পাঠানো হয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়া ইত্যাদি ঘটনা রয়েছে - সেই পুরো ঘটনা একাধিকবার সংঘটিত হওয়াটাই কেবল অসম্ভব বলে মনে হয়। কারণ জাগ্রত অবস্থায় এটির পুনরাবৃত্তি সঙ্গত নয়। তাই বিভিন্ন রেওয়ায়েতের মধ্যে কিছুকে অন্যগুলোর সাথে সমন্বয় করা অথবা কিছুকে অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক। তবে, পূর্বে উল্লেখিত মতানুযায়ী সমস্ত ঘটনা প্রথমে স্বপ্নে প্রস্তুতিস্বরূপ সংঘটিত হওয়া এবং পরে জাগ্রত অবস্থায় একইভাবে সংঘটিত হওয়াতে কোনো আপত্তি নেই। যেমনটি আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি।” [8]
হাদিসের এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হলে এখানে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, আলোচ্য হাদিসগুলো পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়। এখানে এক হাদিসে নবী ﷺ এর স্বপ্নে সংঘটিত মিরাজ এবং অন্য হাদিসে নবী ﷺ এর জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত মিরাজের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তাই নবীদের বিভিন্ন আসমানে অবস্থানের বর্ণনার এই পার্থক্য।
তবে অনেক মুহাদ্দিসের মতে, ইসরা-মিরাজ একটিই ছিল এবং তা সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। সকল হাদিসেই জাগ্রত অবস্থার মিরাজের বিবরণ দেয়া হয়েছে। তাঁরা আলোচ্য হাদিসগুলোকে সমন্বয় করে দেখিয়েছেন যে এতে কোনো পরস্পরবিরোধিতা নেই। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) উল্লেখ করেছেন—
فَمَعَ التَّعَدُّدِ لَا إِشْكَالَ وَمَعَ الِاتِّحَادِ فَقَدْ جُمِعَ بِأَنَّ مُوسَى كَانَ فِي حَالَةِ الْعُرُوجِ فِي السَّادِسَةِ وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّابِعَةِ عَلَى ظَاهِرِ حَدِيثِ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ وَعِنْدَ الْهُبُوطِ كَانَ مُوسَى فِي السَّابِعَةِ؛ لِأَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ فِي الْقِصَّةِ أَنَّ إِبْرَاهِيمَ كَلَّمَهُ فِي شَيْءٍ مِمَّا يَتَعَلَّقُ بِمَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِهِ مِنَ الصَّلَاةِ كَمَا كَلَّمَهُ مُوسَى، وَالسَّمَاءُ السَّابِعَةُ هِيَ أَوَّلُ شَيْءٍ انْتَهَى إِلَيْهِ حَالَةَ الْهُبُوطِ فَنَاسَبَ أَنْ يَكُونَ مُوسَى بِهَا؛ لِأَنَّهُ هُوَ الَّذِي خَاطَبَهُ فِي ذَلِكَ كَمَا ثَبَتَ فِي جَمِيعِ الرِّوَايَاتِ، وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ لَقِيَ مُوسَى فِي السَّادِسَةِ فَأُصْعِدَ مَعَهُ إِلَى السَّابِعَةِ تَفْضِيلًا لَهُ عَلَى غَيْرِهِ مِنْ أَجْلِ كَلَامِ اللَّهِ تَعَالَى، وَظَهَرَتْ فَائِدَةُ ذَلِكَ فِي كَلَامِهِ مَعَ الْمُصْطَفَى فِيمَا يَتَعَلَّقُ بِأَمْرِ أُمَّتِهِ فِي الصَّلَاةِ، وَقَدْ أَشَارَ النَّوَوِيُّ إِلَى شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ، وَالْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى.
অর্থঃ “একাধিকবার [মিরাজ] ঘটেছে—এভাবে ব্যাখ্যা করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকে না।
আর যদি ধরে নেওয়া হয় যে এটি [মিরাজ] একবারই ঘটেছে, তাহলে বিষয়টি এভাবে সমন্বয় করা যায়ঃ [নবী ﷺ এর] উপরের দিকে যাবার সময় মুসা(আ.) ছিলেন ৬ষ্ঠ আসমানে এবং ইব্রাহিম(আ.) ছিলেন ৭ম আসমানে—যেমনটি মালিক ইবন সা‘সা‘আহ(রা.) এর হাদিসের প্রকাশ্য অর্থ হতে বোঝা যায়।
আর [আল্লাহর সাথে কথোপকথনশেষে নবী ﷺ] নিচে নামার সময় মুসা(আ.) ছিলেন ৭ম আসমানে; কারণ বর্ণনায় কোথাও উল্লেখ নেই যে নবী ﷺ এর সাথে তাঁর উম্মতের ওপর ফরজ করা নামাজ সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে ইব্রাহিম(আ.) কথা বলেছেন, যেভাবে মুসা(আ.) কথা বলেছেন। ৭ম আসমান ছিল নামার সময় তাঁর [নবী ﷺ] পৌঁছানো প্রথম স্থান, তাই এটা সঙ্গত ছিল যে মুসা (আ.) সেখানে থাকবেন; কারণ তিনিই তাঁকে এ বিষয়ে [নামাজের পরিমাণ কমানো] সম্বোধন করেছিলেন, যেমনটি সব বর্ণনায় স্পষ্ট। এটিও সম্ভব যে, তিনি মুসা (আ.)-এর সাথে ৬ষ্ঠ আসমানে সাক্ষাৎ করেছিলেন, অতঃপর আল্লাহ তাআ'লার সাথে কথোপকথনের সম্মানার্থে অন্যান্য নবীর উপর বিশেষ মর্যাদা দিয়ে মুসা (আ.)-কে নিয়ে ৭ম আসমানে আরোহণ করেছিলেন। আর এর সুফল প্রকাশ পায় নবী ﷺ–এর সাথে তাঁর কথোপকথনে, যা উম্মতের নামাজ সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। এ ব্যাপারে নববী (র.)-ও ইঙ্গিত করেছেন। আর চূড়ান্ত জ্ঞান আল্লাহ্ তা’আলার কাছেই রয়েছে।” [9]
অর্থাৎ একাধিক হাদিসে মুসা(আ.) এর ভিন্ন ভিন্ন আসমানে অবস্থানের ব্যাখ্যা হল, এগুলো ছিল ভিন্ন সময়ে তাঁর অবস্থানের তথ্য। আর ঐ একই হাদিসে ভিন্ন আসমানে অন্য নবীদের অবস্থানেরও উল্লেখ আছে। অতএব এই প্রবন্ধে উল্লেখিত ২য় হাদিসে বিভিন্ন আসমানে নবীদের অবস্থানগুলো ছিল সেই সময়ে, যখন মুহাম্মাদ ﷺ নিচ থেকে উপরের দিকে গমন করছিলেন। এই সময়ে ২য় আসমানে ঈসা(আ.) ও ইয়াহইয়া(আ.), ৪র্থ আসমানে ইদ্রিস(আ.), ৫ম আসমানে হারুন(আ.), ৬ষ্ঠ আসমানে মুসা(আ.) এবং ৭ম আসমানে ইব্রাহিম(আ.) অবস্থান করছিলেন।
আর এই প্রবন্ধে উল্লেখিত ৩য় হাদিসে বিভিন্ন আসমানে নবীদের অবস্থানগুলো ছিল সেই সময়ে, যখন মুহাম্মাদ ﷺ ঊর্ধ্বে আল্লাহ তা’আলার সাথে কথোপকথন শেষ করে উপর থেকে নিচের দিকে গমন করছিলেন। এই সময়ে ২য় আসমানে ইদ্রিস(আ.), ৪র্থ আসমানে হারুন(আ.), ৬ষ্ঠ আসমানে ইব্রাহিম(আ.) এবং ৭ম আসমানে মুসা(আ.) অবস্থান করছিলেন। হাদিসের শব্দাবলি থেকে এই বিষয়গুলো পরিষ্কার যা ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) উল্লেখ করেছেন।
এখানে নবীদের অবস্থানের বর্ণনাগুলো ভিন্ন সময়ের। অতএব হাদিসগুলোতে কোনো পরস্পরবিরোধিতা নেই।
তথ্যসূত্রঃ
[1] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৯৪২
[2] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩০০
[3] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৭০০৯
[4] এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত দেখুনঃ لِقَاءُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِخْوَانِهِ الأَنْبِيَاءِ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ بِأَرْوَاحِهِمْ دُونَ أَجْسَادِهِمْ. (islamqa)
{নবী (ﷺ) এর তাঁর ভ্রাতৃ নবীদের সাথে বায়তুল মাকদিসে তাঁদের রূহের সাক্ষাৎ, দেহের সাথে সাক্ষাত নয়}
https://islamqa.info/ar/145405/
অথবা https://web.archive.org/web/20251117164212/https://islamqa.info/ar/answers/145405 (আর্কাইভকৃত)
[5] মাজমুউল ফাতাওয়া – ইবন তাইমিয়া, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৫২৬-৫২৭
https://shamela.ws/book/7289/2386
https://shamela.ws/book/7289/2387
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[6] শারহ মুসলিম – ইয়াহইয়া বিন শারাফ আন নববী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩৮
https://shamela.ws/book/1711/482
অথবা https://archive.is/wip/zT0Vc (আর্কাইভকৃত)
[7] হাদিসটি নিম্নরূপঃ
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا قَالَتْ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الْخَلاَءُ، وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ
অর্থঃ “আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি হেরা’র গুহায় নির্জনে থাকতেন। ...”
সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩
[8] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৯৭-১৯৮
https://shamela.ws/book/1673/4025
https://shamela.ws/book/1673/4026
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[9] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৪৮২
https://shamela.ws/book/1673/7913
অথবা https://archive.is/UQ3VT (আর্কাইভকৃত)