Pray for the world economy

আল কুরআনে উল্লেখিত ৭ আসমান সম্পর্কিত তথ্য

 

নাস্তিক প্রশ্নঃ

কুরআন জানায়, আমাদের মহাবিশ্ব সাত স্তর বিশিষ্ট (Quran 71:15) ! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র দিয়ে গঠিত, সেখানে সপ্তস্তর বলে কিছু নেই! তবে কেন এ ধরণের অসত্য তথ্য?

অনেকেই দাবি করেন আয়াতে উল্লেখিত সপ্তস্তর বলতে আকাশের বায়ুমণ্ডলিয় স্তর বোঝানো হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর উপরিভাগে বায়ুস্তর রয়েছে পাঁচটা!!!

 

উত্তরঃ 

কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছেঃ

 

“তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন?” [1]

 

অভিযোগকারীগণ এমন ভঙ্গিতে কুরআনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যেন মহাকাশের সীমা-পরিসীমা তাদের জানা রয়েছে। মানবজাতি এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের যে টুকু অংশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছে(visible/observable universe) তা সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের এক অতি ক্ষুদ্র অংশ। [2] শুধু তাই না, মহাবিশ্ব ক্রম সম্প্রসারণশীল। যার পরিসীমা সম্পর্কে আপনার সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই, আপনি কী করে বলতে পারেন তার ৭টি স্তর নেই? আমরা যদি সাধারণ যুক্তিতে আসি, তাহলে বলতে পারিঃ যে কোন আয়তনের স্থানকেই নির্দিষ্ট পরিমাপ বা গুণাগুণের ভিত্তিতে ৭ বা যে কোন সংখ্যায় বিভক্ত করা যায়। কাজেই “মহাকাশ ৭ স্তরে বিভক্ত নয়” এই কথাটি তাত্ত্বিকভাবে ভুল। অভিযোগকারীরা মহাকাশে ট্রিলিয়ন সংখ্যক ছায়াপথ আর বিলিয়ন বিলিয়ন সংখ্যক নক্ষত্রের প্রসঙ্গ টেনে বলতে চেয়েছেন যে মহাকাশে কোন সপ্তস্তর নেই। এটাও একটি ভুল যুক্তি। কুরআনের আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে মহাকাশের সাত স্তর বলতে কোন নক্ষত্রের কথা বলা হয়নি। আকাশের স্তর মানে আকাশের নির্দিষ্ট আয়তনের এলাকা বা স্থান। একেকটি স্তর বা নির্দিষ্ট আয়তনের স্থানে নক্ষত্র, ছায়াপথ বা অন্য কিছু থাকতে পারে।

 

ধরা যাক, একটা আলমারীর ৭টা ড্রয়ার আছে। প্রত্যেকটা ড্রয়ারে ২০টা করে কলম আছে। অর্থাৎ আলমারীতে মোট কলম আছে ১৪০টা।

কেউ বলা শুরু করলঃ এই আলমারীতে ১৪০টা কলম আছে; কাজেই এতে ৭টা ড্রয়ার থাকতে পারে না!

এই ব্যক্তির কথাকে কি কোন যুক্তিসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারবে?

নাস্তিকদের যুক্তিও অনেকটা এ রকম। কুরআন বলেছে আসমানের ৭টি স্তরের কথা। নাস্তিকরা এই কথাকে ভুল প্রমাণের জন্য নক্ষত্র আর ছায়াপথের কথা নিয়ে এসেছে।

 

দৃশ্যমান মহাবিশ্ব ও এর বাইরের অংশ সকল কিছুকে বিবেচনায় এনে তুর্কী মহাকাশবিজ্ঞানী ড. হালুক নুর বাকি(Haluk Nur Baki) সমগ্র মহাবিশ্বকে ৭টি স্তর বা অংশে বিভক্ত করেছেন। এই স্তরগুলো হচ্ছেঃ

 

১. মহাশূন্যের যে ক্ষেত্র সৌরজগত দ্বারা গঠিত তা প্রথম আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

২. সম্প্রতি ‘মিল্কিওয়ে’ বা আকাশগঙ্গার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের ছায়াপথের এই বিস্তৃত ক্ষেত্রটি দ্বিতীয় আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৩. ছায়াপথসমূহের ‘Local Cluster’ মহাকাশীয় ক্ষেত্র তৃতীয় আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৪. ছায়াপথসমূহের সমন্বয়ে গঠিত মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় চৌম্বক ক্ষেত্র চতুর্থ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৫. অতি দূর থেকে আগত আলোকতরঙ্গের উৎসসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী মহাজাগতিক বলয় পঞ্চম আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৬. মহাবিশ্বের প্রসারমান ক্ষেত্র ষষ্ঠ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৭. মহাবিশ্বের প্রান্তহীন অসীমত্বের নির্দেশক সর্ববহিরস্থ ক্ষেত্র সপ্তম আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

 

আসমানের এই স্তরসমূহ অকল্পনীয় স্থান জুড়ে আছে। প্রথম আসমান স্তরের পুরুত্ব আনুমানিক ৬.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। দ্বিতীয় স্তর তথা আমাদের ছায়াপথের ব্যাস হল ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ। তৃতীয় স্তরের বিস্তার ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পঞ্চম স্তরটি ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে। ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে। এ কথা বলা বাহুল্য যে, সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত। [3]

 

এই তথ্য উল্লেখের উদ্যেশ্য এটা নয় যে এই ৭টি স্তরই কুরআনে বর্ণিত সাত আসমান বা সপ্তাকাশ এটা প্রমাণ করা। [আমি নিজেও মনে করি না এই ৭ স্তরই কুরআনে উল্লেখিত ৭ আসমান। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি মানুষের জ্ঞান এখনো ১ম আসমান অতিক্রম করেনি।] মহাকাশের কোন কোন অংশ সপ্তাকাশ গঠন করে তা মহান স্রষ্টা আল্লাহই ভালো জানেন। এখানে এই স্তরবিভাগ শুধুমাত্র এটা বোঝানোর জন্য দেখানো হল যে দৃশ্যমান মহাকাশ ও এর বাইরের অংশ বিবেচনা করে সমগ্র মহাকাশকে সহজেই ৭ ভাগে বিভক্ত করা যায় তথা সাত আসমান বা সপ্তাকাশরূপে বিবেচনা করা যায়। কাজেই কুরআনে উল্লেখিত তথ্যকে আধুনিক বিজ্ঞান কিংবা যুক্তি কোনটি দিয়েই ভুল প্রমাণ করা সম্ভব নয়। বরং যারা কুরআনে সপ্তাকাশের তথ্য থেকে ‘ভুল’(!) বের করার চেষ্টা করেছেন তারা মূলত নিজ নির্বুদ্ধিতারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

 

অভিযোগকারীরা আরো বলেছেন যে সপ্তাকাশের ব্যাখ্যায় অনেকে বায়ুমণ্ডলীয় স্তরের কথা উল্লেখ করে। এটি মূলত একটি ভুল ব্যাখ্যা। কেননা কুরআনে বলা হয়েছেঃ

 “আমি নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা ...” [4]

 

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এখানে স্পষ্টত মহাশূন্যের এমন এলাকার কথা বলা হচ্ছে যেখানে দীপ্তিময় জ্যোতিষ্ক আছে। এখানে বায়ুমণ্ডলের কথা বলা হচ্ছে না। কেননা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সীমার মাঝে এ ধরণের দীপ্তিময় জ্যোতিষ্ক নেই। কাজেই সপ্তাকাশ দ্বারা মোটেও বায়ুমণ্ডলের ৭ স্তর বোঝানো হচ্ছে না।

 

 কিছু হাদিসে বলা হয়েছে এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্ব ৫০০ বছর। তবে উক্ত মর্মে যতগুলোই বর্ণনা এসেছে সবগুলোই যঈফ বা দুর্বল। (তিরমিযী হা/৩২৯৪, ৩২৯৮; আহমাদ হা/১৭৭০, ৮৮২৮; বাযযার হা/৪০৭৫, সনদ যঈফ)। এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্বের বিষয়টি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এটি অদৃশ্যের বিষয়। (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ৩/১১৪৯)। [5]

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]  আল কুরআন, নুহ ৭১:১৫

[2]  ■ “How Big is the Universe?”

http://www.space.com/24073-how-big-is-the-universe.html

■  “How large is the observable universe?”

http://www.pbs.org/wgbh/nova/blogs/physics/2012/10/how-large-is-the-observable-universe/

■ “The Known Universe - simulation of the visible universe based on real data”

https://www.youtube.com/watch?v=KbImt1AVQV4

■ “The Universe versus the observable universe”

https://en.wikipedia.org/wiki/Observable_universe#The_Universe_versus_the_observable_universe

[3]  ■ “Qur'anic Commentary & Analysis through the Lens of Modern Science”

http://www.ghanaweb.com/GhanaHomePage/religion/Qur-anic-Commentary-Analysis-through-the-Lens-of-Modern-Science-4-315276

■ “সপ্তস্তর বিশিষ্ট আসমান ও পৃথিবীর ক্রমবিকাশে চারটি ধাপ”

https://sorolpath.wordpress.com/2011/08/15/seven_heaven/

অথবা https://archive.is/NopxG (আর্কাইভকৃত)

[4]  আল কুরআন, মুলক ৬৭:৫

[5] দেখুনঃ https://at-tahreek.com/article_details/9980

অথবা

https://web.archive.org/web/20220804172235/https://at-tahreek.com/article_details/9980 (আর্কাইভকৃত)