Pray for the world economy

জিহাদের উদ্যেশ্য কি শুধুই অমুসলিমদেরকে হত্যা করা?

 

মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিজাহুল্লাহ)

অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার

 

অনুবাদকের ভূমিকাঃ  ইসলামকে একটি বর্বর ধর্ম হিসাবে উপস্থাপন করার জন্য ইসলামের শত্রুরা প্রচার করেঃ ইসলামে নাকি জিহাদের নামে অন্যায়ভাবে অমুসলিমদেরকে হত্যা করা হয়। তাদের প্রচারণায় অনেক সময় মনে হয় জিহাদের উদ্যেশ্য বুঝি শুধু অমুসলিমদের হত্যা করা আর বিনাশ করা!এমনকি মুসলিম সমাজেও ‘জিহাদ’ শব্দটি প্রায় ট্যাবুতে পরিনত হয়েছে। এ প্রবন্ধে জিহাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুল ধারণার দূরীকরণ এবং জিহাদের হিকমতের আলোচনা থাকছে।

 

ফতোয়া নং ২১৯৬১: জিহাদের হিকমত

 

প্রশ্নঃ

জিহাদের মানে কি শুধুই অমুসলিমদেরকে হত্যা করা?

 

উত্তরঃ

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর।

আরবিতে জিহাদ (جهاد) কথাটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সংগ্রাম করা এবং শক্তি ব্যয় করা।

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় জিহাদ হচ্ছে, আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ করার জন্য ও পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য একজন মুসলিমের চেষ্টা-সংগ্রাম।

 

অমুসলিমদেরকে মেরে ফেলা ইসলামী জিহাদের উদ্যেশ্য নয়। বরং এর উদ্যেশ্য হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর শরিয়াহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্বের দিকে নিয়ে আসা। বিভিন্ন দ্বীনের অবিচার থেকে মুক্ত করে ইসলামের ন্যায়বিচারের দিকে নিয়ে আসা। আল্লাহ বলেছেন,

 

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ 

অর্থঃ আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। ...

(সুরা আনফাল ৮ : ৩৯)

 

এ আয়াতের তাফসিরে শায়খ আব্দুর রহমান আস সা’দী বলেছেন,

 

এখানে আল্লাহ তাঁর জন্য জিহাদের উদ্যেশ্য বর্ণনা করছেন। কাফিরদের রক্ত ঝড়ানো বা তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়া এর উদ্যেশ্য নয়। বরং এর উদ্যেশ্য হচ্ছে দ্বীন (ইবাদাত) শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। এবং আল্লাহর দ্বীন অন্য সকল দ্বীনের উপর প্রবল হয়। আর যা কিছু এর বিরুদ্ধে যায়, সেগুলোকে  দমন করা। হোক তা শির্ক বা অন্য কিছু – যাকে আয়াতে ‘ফিতনা’ কথাটির দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। যদি এই উদ্যেশ্য অর্জিত হয়ে যায়, তাহলে কোনো যুদ্ধ বা হত্যা চলবে না।

[তাফসির সা’দী, পৃষ্ঠা ৯৮]

 

যেসব কাফিরের সাথে আমরা জিহাদ করি, এর দ্বারা তো তারাই উপকৃত হবে। আমরা তাদের সাথে সংগ্রাম করি এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়ি যাতে করে তারা আল্লাহর মনোনিত দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। যা তদেরকে ইহকাল ও পরকালের নাজাতের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ বলেছেন,

 

 كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ 

অর্থঃ তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে; ...

(সুরা আলি ইমরান ৩ : ১১০)

 

ইমাম বুখারী(র.) [হাদিস নং ৪৫৫৭] বর্ণনা করেছেন, আবু হুরাইরা(রা.) বলেছেন, “তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে” কথাটির অর্থ হলো, তোমরা মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম মানুষ। তোমরা তাদেরকে গলায় শৃঙ্খলবদ্ধ করে নিয়ে আসবে যতক্ষন না তারা ইসলামে প্রবেশ করে।

ইবনুল জাওযি(র.) বলেছেন, "এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, তারা (যুদ্ধে) ধৃত হবে এবং আবদ্ধ হবে। কিন্তু যখন তারা ইসলামের সত্যতা জানতে পারবে, তখন  নিজ ইচ্ছায় তাতে প্রবেশ করবে এবং এভাবে জান্নাতের অধিকারী হবে।"  [1]   

 

২০২১৪ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা জিহাদের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তা হচ্ছে চার প্রকারের; যথাঃ জিহাদুন নাফস (নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ), জিহাদুশ শাইত্বন (শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ), কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ।

 

৩৪৬৪৭ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা জিহাদের হিকমত সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে এটিও পড়ুন।

 

এবং আল্লাহই উত্তম জানেন।

 

মূল ফতোয়াঃ

আরবি : https://islamqa.info/ar/21961/

ইংরেজি : https://islamqa.info/en/21961/

 

 

[1] এখানে শুধুমাত্র যুদ্ধে আটক যুদ্ধবন্দীর কথা বলা হচ্ছে। সকলের কথা বলা হচ্ছে না। এদের কাউকে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানো হবে না।

বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ তাফসির সা'দী, সুরা বাকারাহর ২৫৬ নং আয়াতের তাফসির।

[This refers to the perfection of Islam, because its proofs are perfect and the signs of its soundness are clear. Because it is the religion of reason and knowledge, the religion of sound human nature and of wisdom, the religion of righteousness and piety, the religion of truth and guidance, and it is perfect and acceptable to human nature, there is no need to compel anyone to enter it, because compulsion is only needed in the case of that which is off-putting and contrary to the facts and truth, or that of which the proofs and signs are not clear. Otherwise, anyone who comes to know this religion then rejects it and does not accept it, it is because of his stubbornness, because right path has become distinct from the wrong path, so no one has any excuse for rejecting it and not accepting it. There is no contradiction between this idea and the many verses that speak of jihad. Allah enjoined fighting so that the religion (worship) will all be for Allah alone and to ward off the aggression of those who are hostile towards Islam. The Muslims are unanimously agreed that jihad is ongoing and that jihad in word and in deed is a permanent obligation. Any commentator who thinks that this verse contradicts the verses of jihad, and is certain that it has been abrogated, holds a weak view, as is obvious from the wording and the meaning and as is clear to anyone who studies the verse, as we have pointed out.]

https://islamweb.com/ar/library/index.php?page=bookcontents&idfrom=142&idto=142&bk_no=209&ID=145

- অনুবাদক