Pray for the world economy

ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে কি আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কার করে উদ্বাস্তু বানানো হয়েছিলো?

 

প্রশ্নঃ

নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের কথা বলেছেন। আরব উপদ্বীপে শুধু মুসলিমরাই থাকতে পারবে। মুসলিমরা আরব উপদ্বীপের ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে নিজ গৃহ থেকে উচ্ছেদ করে উদ্বাস্তু করে দিয়েছিলো। ভিন্ন ধর্মের লোকদেরকে বিনা অপরাধে এভাবে নির্বাসন দেয়াকে আপনি কতোটুকু মানবিক বলে মনে করেন?

 

উত্তরঃ

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لَئِنْ عِشْتُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لأُخْرِجَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ ‏"‏ ‏.‏

উমার বিন খাত্তাব(রা.) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ () বলেছেনঃ ইনশাআল্লাহ আমি জীবিত থাকলে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অবশ্যই আরব উপদ্বীপ হতে বের করে দেবো [1]

 

উমার ইবনু আবদুল আযীয(র.) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ () সর্বশেষ কথা যা বলেছেন তাতে ছিল,

قَاتَلَ اللهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ لَا يَبْقَيَنَّ دِينَانِ بِأَرْضِ الْعَرَبِ

আল্লাহ্ তা‘আলা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে ধ্বংস করুন। তারা নিজেদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। আরবের মাটিতে দুই ধর্ম একত্র হতে পারবে না। [2]  

 

ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বহিষ্কারের প্রেক্ষাপট

 

নবী(ﷺ) এর জীবনের শেষ দিকে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের দিক থেকে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র দেখা দিয়েছিলো। আবু আমির নামে বনু খাযরাজ গোত্রের এক খ্রিষ্টান ইসলাম ও মুসলিমদের ভয়াবহ বিরোধী ছিলো। ধার্মিকতার জন্য তার উপাধী ছিলো ‘রাহিব’। হুনাইন পর্যন্ত সকল যুদ্ধেই সে মুসলিমদের বিপক্ষে ছিলো। হাওযিনের মতো বিশাল ও শক্তিশালী গোত্র যখন মুসলিমদের কাছে পরাজিত হলো, তখন সে খ্রিষ্টানদের কেন্দ্র সিরিয়াতে চলে যায়। এরপর সে রোম সম্রাট হিরাকল (হেরাক্লিয়াস)কে মদীনা আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। রোম সম্রাটও এ প্রস্তাবে সাড়া দেন ও তাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। আবু আমির রাহিবের পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু বিশ্বাসঘাতক কুবা মসজিদের নিকট একটা নকল মসজিদ বানায়। যাতে সে মসজিদকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য আর বিভেদ ছড়ানো যায়। সে মসিজদের মধ্যে অস্ত্র-শস্ত্র জমা করার আদেশও দেয় আবু আমির। নবী(ﷺ) যখন তাবুকের অভিজানে যাচ্ছিলেন তখন ঐ ষড়যন্ত্রের মসজিদে এসে সলাত আদায় করতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানায় বিশ্বাসঘাতকেরা। নবী(ﷺ) অভিজান থেকে ফিরে এসে সেখানে সলাত আদায়ের কথা বলেন। ইতিমধ্যে আল্লাহ তা’আলা সুরা তাওবার ১০৭ নং আয়াত নাজিল করে সেই বেঈমানদের চক্রান্তের কথা তাঁর নবীকে জানিয়ে দেন। চক্রান্তের সেই ঘরকে “মসজিদে যিরার” বলে উল্লেখ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সেটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। [3]

 

মদীনায় কয়েকটি ইহুদি গোত্র বসবাস করতো। রাসুল(ﷺ) মদীনায় হিজরত করে আসার পরে তাদের সাথে মদীনার সনদের মাধ্যমে চুক্তিতে আবদ্ধ হন এবং সবার সাথে শান্তিতে সহাবস্থানের ব্যবস্থা করেন। সেখানে সবার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার ছিলো, পারস্পরিক উপকারের কথা ছিলো। মাজলুমকে সাহায্য করার কথা ছিলো, বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে মিলিতভাবে প্রতিহত করার কথা ছিলো। [4] মুসলিমরা ন্যায়পরায়নতার সাথে সে চুক্তি রক্ষা করতো এবং সামান্যতম বেইনসাফীও করতো না। এর একটি উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আশআছ ইবন কায়েস(রা.) এর সাথে এক ইহুদি ব্যক্তির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। ইহুদি ব্যক্তিটি তাঁর জমি আত্মসাৎ করতে চাচ্ছিলো। সে ঐ জমিটি তার নিজের বলে শপথ করে। আশআছ(রা.) এর নিকটে ঐ জমির স্বপক্ষে প্রমাণ না থাকায় রাসুল(ﷺ) সেই জমিটি ঐ ইহুদি ব্যক্তিকে দিয়ে দেন। [5] মুসলিমরা সব সময়ে চুক্তির ধারাগুলো বিশ্বস্ততার সাথে পালন করে আসলেও ইহুদিরা বিভিন্ন সময়ে চুক্তি ভঙ্গ করতে থাকে। তারা মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ লাগানোর চেষ্টা করতে থাকে, এক মুসলিম মহিলার সম্ভ্রমহানী করে। [6] নবী(ﷺ)কে হত্যার চেষ্টা করে, কুরাঈশদেরকে মুসলিমদের দুর্বল দিক জানিয়ে দেয় ও যুদ্ধের জন্য উত্তেজিত করে। [7] আহযাবের যুদ্ধের সময়ে কুরাঈশদের সাথে আঁতাত করে সরাসরি চুক্তি ভঙ্গ করে ও মুসলিমদেরকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। [8]  তাদের দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের ষড়যন্ত্র প্রকাশ পাওয়ায় নির্বাসনসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাদের দ্বারা নানা প্রকারের চক্রান্ত অব্যাহত থাকলে আল্লাহ তা’আলা ওহী দ্বারা নবী(ﷺ)কে অবহিত করেন যে আরব উপদ্বীপে কেবলমাত্র বিশুদ্ধ একত্ববাদের ধর্মই থাকা উচিত এবং সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট একমাত্র অনুমোদিত ধর্ম ইসলামই অবশিষ্ট থাকবে। [9]

 

নবী(ﷺ) এর ইচ্ছা ওহীর অনুগামী ছিলো। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যগুলো লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। আরব উপদ্বীপ হচ্ছে ওহী নাজিলের স্থান। ইসলামের কেন্দ্র। কাজেই সে স্থানে আল্লাহর মনোনিত ধর্মের বিরোধী ও এর বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছিলো। এ প্রবন্ধের শুরুতেই নবী(ﷺ) এর বাণী উল্লেখ করা হয়েছে, “আরবের মাটিতে দুই ধর্ম একত্র হতে পারবে না।

 

এখন ইসলামের সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশ্ন আসতে পারেঃ সে জন্য অমুসলিমদেরকে এভাবে হুট করে তাদের বসত ভিটা থেকে বের করে দেয়া হবে? তাদেরকে উদ্বাস্তু ও অসহায় বানিয়ে দেয়া হবে?

 

ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে কি হঠাৎ করে অসহায় অবস্থায় আরব-উপদ্বীপ থেকে বিতারণ করা হয়েছে?

 

এর উত্তরে আমাদেরকে সিরাত গ্রন্থগুলো থেকে ঘটনাপঞ্জি সতর্কতার সাথে দেখতে হবে।

প্রথমে আমরা দেখবো - নবী(ﷺ) ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের ইচ্ছা পোষণের সাথে সাথেই কি বিনা নোটিশে তাদেরকে নিজ ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো?

এর উত্তর হচ্ছে—না। এমন কিছুই করা হয়নি। সাহাবীরা ব্যাপারটিকে এভাবে দেখেননি।

 

সিরাত গ্রন্থগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত আছে যে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুর পরেও আরব উপদ্বীপে খ্রিষ্টান ও ইহুদিরা বাস করতো। মুসলিমরা তাদেরকে বের করে দেবার মতো কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।

 

একবার খলিফা উমার(রা.) এক অন্ধ বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখেন। এ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পারলেন যে সে ইহুদি। উমার(রা.) জানতে চাইলেন, কেন সে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়েছে।
জবাবে সে জানালোঃ জিজিয়া, প্রয়োজন এবং জীবনধারণের চাহিদা।
খলিফা উমার(রা.) হাত ধরে তাকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসেন, তৎক্ষণাৎ তার প্রয়োজন পূরণ করেন এবং বাইতুল মালের খাজাঞ্চীর কাছে বার্তা পাঠানঃ এ ব্যক্তি এবং এর মতো অন্য ব্যক্তিদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রাখবে। আল্লাহর কসম, আমরা যৌবনে (জিজিয়া) নিয়ে বার্ধক্যে তাকে কষ্ট দিলে তার প্রতি এটা আমাদের ইনসাফ করা হবে না। সদকা তো নিঃসন্দেহে অভাবগ্রস্ত ও নিঃস্ব ব্যক্তিদের জন্য। আর এ হচ্ছে আহলে কিতাবের নিঃস্ব ব্যক্তি।  [10]

 

আমরা দেখলাম যে উমার(রা.) খলিফা থাকা অবস্থাতেও মদীনায় ইহুদি বসবাসের বিবরণ। যা নবী(ﷺ) এর মৃত্যুর অনেক পরের ঘটনা। মদীনার সাহাবীদের ইহুদি প্রতিবেশী থাকার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমনঃ

 

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার গোলামকে বলতে লাগলেন, তুমি কি আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তুমি কি আমাদের ইহুদি প্রতিবেশিকে তা দিয়েছো? আমি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল(আ.) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত নসিহত করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো (সম্পদের) ওয়ারিস বানাবেন। [11]

 

 এমনকি উমার(রা.) এর একজন অমুসলিম দাস ছিলেন যিনি ছিলেন খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী। উমার(রা.) এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তাঁর সাথে মদীনাতেই ছিলেন। শুধুমাত্র খ্রিষ্টান হবার জন্য তাকে মোটেই মদীনা থেকে বের করে দেয়া হয়নি।

 

আশাক নামে সেই খ্রিষ্টান দাস ছিল নিজেই বর্ণনা করেছেনঃ 

আমি ছিলাম উমারের(রা.) খ্রিষ্টান গোলাম। তিনি একদিন আমাকে বললেন, “মুসলিম হয়ে যাও।...”

কিন্তু আমি অস্বীকৃতি জানালে তখন তিনি বললেন, “ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই।”

তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে তিনি আমাকে মুক্ত করে দেন। বলেন, “তোমার যেখানে ইচ্ছা চলে যাও”। [12]

 

এর অর্থ হলো, সাহাবীরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের হাদিস থেকে এটা বোঝেননি যে ওখানে বসবাসরত ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে একদম সাথে সাথেই বের করে দিতে হবে বা শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মালম্বী হলেই অন্য কোনো কারণ ব্যতিত তাদেরকে বের করে দিতে হবে।

তবে রাসুল(ﷺ) এর হাদিস থেকে এটা পরিষ্কার যে চূড়ান্তভাবে আরব উপদ্বীপে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অবস্থান বৈধ নয়।

 

১ম খলিফা আবু বকর(রা.) এর আমলেও ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বের করে দেবার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং খ্রিষ্টানরা রাসুল(ﷺ) এর সময়ে যে চুক্তি করেছিলো, আবু বকর(রা.) এর সময়ে তা নবায়ন করেছিলো বলেও উল্লেখ আছে। [13] ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের কিছু ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ২য় খলিফা উমার(রা.) এর আমলে। সে ঘটনাগুলোর পেছনেও কিছু প্রেক্ষাপট রয়েছে।

 

উমার(রা.) নাজরানের খ্রিষ্টানদেরকে ও খায়বারের ইহুদিদেরকে আরব ভূখণ্ড থেকে ইরাক ও শামের (বৃহত্তর সিরিয় অঞ্চল) পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার কারণ ছিলো খায়বারের ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা তাদের কৃত চুক্তি রক্ষা করতে পারেনি। যে শর্তে তারা এবং আবু বকর(রা.)-এর যুগে আবদ্ধ ছিল তা তারা ভেঙে দিয়েছিলো। তাদের বৈঠকগুলো হয়ে ওঠে শয়তানের আড্ডাখানা। তাই তাদের বিতাড়ন ছিলো অত্যন্ত জরুরী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু অন্য এলাকার ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা মাদানী সমাজব্যবস্থায় যথারীতি বসবাস করতো। সমুদয় অধিকারের সুফল তারা ভোগ করতো। [14]

 

রাসুল(ﷺ) এর বাণীর দ্বারা আরবে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের স্থায়ী বসবাস অবৈধ হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে তখনই সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে যখন তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এভাবে তাদের প্রতি ইনসাফের বাত্যয় ঘটানো হয়নি। চুক্তি ভঙ্গের আগে কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি। চুক্তি রক্ষাকারীরা যথারীতি আরব উপদ্বীপে বাস করেছে। সেইসাথে, বাইরে থেকেও নতুন করে আর কোনো ইহুদি-খ্রিষ্টানকে আরব-উপদ্বীপে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি। এভাবে রাসুল(ﷺ) এর কথা বাস্তবায়িত করা হয়েছে।

 

আরব উপদ্বীপ থেকে ইহুদিদের বহিষ্কার

 

ইহুদিদের বহিষ্কারের কারণ

 

খায়বারের ইহুদিদের বহিষ্কারের কারণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন উমার(রা.) বলেন :

খায়বারবাসীরা আবদুল্লাহ ইবন উমার(রা.)-এর হাত পা ভেঙে দিলো, তখন উমার(রা.), ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসুল() খায়বারের ইহুদিদের সঙ্গে তাদের মাল-সম্পত্তি সম্পর্কে চুক্তি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা যতদিন তোমাদের রাখেন, ততদিন আমরাও তোমাদের রাখবো এই অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবন উমার(রা.) তার নিজ সম্পত্তি দেখাশোনা করার জন্য খায়বার গেলে রাতে তার উপর আক্রমণ করা হয় এবং তাঁর দুটি হাত পা ভেঙে দেওয়া হয়। সেখানে ইহুদিরা ব্যতিত আমাদের আর কোনও শত্রু নেই। তারাই আমাদের দুশমন। তাদের ওপর আমাদের সন্দেহ হয়। অতএব আমি তাদের নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ...

... অতঃপর উমার(রা.) তাদেরকে নির্বাসিত করেন এবং তাদের ফল-ফসল, মালামাল, উট, লাগাম রজ্জু ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য দিয়ে দেন [15]

 

ইহুদিদেরকে কি সহায়-সম্পদহীন উদ্বাস্তু বানানো হয়েছিলো?

 

আমরা দেখলাম ইহুদিরা চুক্তি ভঙ্গ করে আবদুল্লাহ ইবন উমার(রা.) এর উপর আক্রমণ করে তাঁর হাত বা ভেঙে দেবার প্রেক্ষিতে খায়বারের ইহুদিদেরকে বিতাড়ন করা হয়। তবে এই বিতাড়ন মোটেও তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নিয়ে কপদর্কশূণ্য করে করা হয়নি। ইসলাম কোনো জুলুমের ধর্ম নয়। তাদের ফল-ফসল, মালামাল, উট, লাগাম রজ্জু ইত্যাদি সমুদয় দ্রব্যের মূল্য পরিশোধ করে এরপর তাদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে চলে যেতে দেয়া হয়েছে।

 

এবার আমরা ইতিহাসের আলোকে পর্যালোচনা করবো উমার(রা.) কেমন জায়গায় ইহুদিদেরকে পাঠান। আমরা দেখবো সেটা ইহুদিদের জন্য পছন্দনীয় ও ভালো জায়গা ছিলো নাকি খারাপ জায়গা ছিলো। তারা মানবেতর অবস্থার মধ্যে পড়েছিলো নাকি স্বাচ্ছন্দ্যকর অবস্থায় ছিলো।

 

আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের পর ইহুদিরা কেমন অবস্থার সম্মুখীন হয়?

 

ইতিহাস থেকে আমরা পাইঃ উমার(রা.) ইহুদিদেরকে শামের (বৃহত্তর সিরিয় অঞ্চল) আরিহাতে (Jericho) পাঠান। আর বাকি ইহুদিদেরকে তায়মা (ইয়েমেনের একটা অংশ) পাঠান। [16]

 

উমার(রা.) এর আমলে রোমানদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ চলছিলো। ফিলিস্তিনের জেরুজালেম উমার(রা.) এর শাসনামলের শুরুতেই মুসলিমদের হাতে ছিল না। শহরটি কিছুটা পরে বিজয় হয়, ১৫ হিজরীতে। [17]

 

রাসুল(ﷺ) এর জীবদ্দশাতেও কিছু ইহুদিকে তাদের অপরাধমূলক কাজের জন্য নির্বাসন দেয়া হয়েছিলো। তারা মদীনা থেকে শাম (Greater Syrian region) এর বিভিন্ন অঞ্চলে চলে গিয়েছিলো। [18] উমার(রা.) এর সময়ে ইহুদিদের আরো একটা দলকে কাছের আরিহা বা জেরিকোতে পাঠানো হয়। এভাবে শাম ও ইয়েমেনে বহিষ্কৃত ইহুদিদের বেশ বড় এক বসতি গড়ে ওঠে।

 

ইহুদিরা ৫০০ বছর জেরুজালেম থেকে বহিস্কৃত ছিল। ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমানরা Temple Mount (বাইতুল মুকাদ্দাস) ধ্বংস করে তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। এরপর থেকে তারা এশিয়া, আফ্রিকা ও  ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় নিবাস গড়ে তুলেছিলো। [19] এভাবে আরবের বিভিন্ন অঞ্চলেও কিছু ইহুদি গোত্রের বসতি গড়ে উঠেছিলো। তারা প্রতীক্ষায় ছিলো কবে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে (Holy Land) ফিরে যাবে।

 

এই তথ্যটি বেশ সুপরিচিত যে ইহুদি ধর্মালম্বীদের নিকট সব থেকে প্রিয় ও পবিত্র শহর হচ্ছে জেরুজালেম। সারা পৃথিবীর সব ইহুদিদের নিকটেই পরম আকাঙ্খিত শহর এটি। ইহুদিরা সব সময়েই এই শহরে থাকতে চায়, ফিরে আসতে চায়। জেরুজালেমকে স্মরণ করা ও ভালোবাসা তাদের ধর্মের একটি অংশ। [20]

 

১৫ হিজরিতে জেরুজালেম মুসলিমদের হাতে বিজয় হয়ে গেল। প্রায় পুরো ফিলিস্তিন মুসলিমদের হাতে এসে গেল। ফিলিস্তিনে ক্ষমতার পালাবদল হল।

এরপর কী হলো?

এবারের তথ্যগুলো আমি ইহুদি সূত্র থেকে উল্লেখ করবো; মুসলিম সূত্র থেকে না। এর ফলে আর কারো এটা বলার সুযোগ থাকবে না যে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ মুসলিম উৎস থেকে ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ইস্রায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক Menashe Har-El তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয় ও জেরুজালেম হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। [21] তাঁর Golden Jerusalem বইতে উল্লেখ করা হয়েছে—

 

“The Caliph Omar visited Jerusalem shortly after its conquest, accompanied by Jewish sages from Tiberias and captive Jews from Homs and Damascus. Omar declared the Temple Mount to be a place of prayer, thus pleasing the Jews, who regarded this as foreshadowing their redemption. Omar asked the Jews "Where would you wish to live in the city?' And they answered, in the southern part; and that is the marketplace of the Jews. Their intention was to be close to the Temple and its gates, as well as the waters of Siloam for ritual bathing. The Emir of the Believers granted this to them" (Sefer Hayishuv, p. 18)” [22]

অর্থাৎ, জেরুজালেম বিজয়ের পরপরই উমার(রা.) সেখানে সফর করেন। তাঁর সাথে ছিলো তাবারিয়ার (শামের একটি অঞ্চল) ইহুদি পণ্ডিতরা এবং দামেস্ক ও হোমসের অবরুদ্ধ ইহুদিরা। উমার(রা.) বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইবাদতের স্থান হিসেবে ঘোষণা দেন যা ইহুদিদেরকে উৎফুল্ল করে। তারা একে তাদের মুক্তির পূর্বাভাষ হিসেবে দেখছিলো। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন “তোমরা শহরে কোথায় থাকতে চাও?” তারা বললো যে তারা দক্ষিণ অংশে থাকতে চায়। ...তাদের ইচ্ছা ছিলো বাইতুল মুকাদ্দাসের, এর দরজাগুলোর এবং সেই সাথে শাস্ত্রীয় স্নানের জন্য সিলোয়ামের পানির উৎসের কাছাকাছি অবস্থান করা। আমিরুল মুমিনীন [উমার(রা.)] তাদেরকে এর অনুমতি দিলেন। 

 

আমরা দেখলাম যে ইহুদি সূত্রমতে, জেরুজালেম বিজয়ের পর পরই উমার(রা.) সেখানে ইহুদিদেরকে তাদের মতামতের ভিত্তিতে তাদেরই পছন্দমতো জায়গায় থাকতে দিয়েছেন। চুক্তিভঙ্গ করে ইহুদিরা আরব থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো। আমরা ইতিমধ্যেই সেই বিতাড়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। উমার(রা.) তাদের সহায়-সম্পদের মূল্য পরিশোধ করে এরপর তাদেরকে সেখান থেকে বৃহত্তর সিরিয় অঞ্চল বা শামে নির্বাসন দেন। এরপর কিভাবে বৃহত্তর সিরিয় অঞ্চল থেকে তারা তাদের প্রিয় জেরুজালেমে পুনর্বাসিত হয় তা আমরা ইহুদি সূত্র থেকে উল্লেখ করেছি।

সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা তো দূরের কথা, চুক্তি ভঙ্গ করে অপরাধ করা একটা সম্প্রদায়কে তাদের সম্পদ সহায়-সম্পদের মূল্য পরিশোধ করে অন্য এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। এরপর তাদেরকে তাদের প্রিয় ধর্মীয় এলাকায় পুনর্বাসিত করা হলো। এর চেয়ে বেশি মানবিক আচরণ আর কী হতে পারে?

 

এবার যে বই থেকে রেফারেন্স দেবো সেটার নাম The History of Jerusalem: The Early Muslim Period (638-1099) । সম্পাদনা করেছেন Joshua Prawer ও Haggai Ben-Shammai। বইয়ের যে আর্টিকেল থেকে রেফারেন্স দেবো এর লেখক ইস্রায়েলী ঐতিহাসিক Moshe Gil।

 

এই বইতে উল্লেখ করা হয়েছে,

 

“...the conquering Muslims were well aware of the strong Jewish bond with Jerusalem, the contemporary accounts discussed here absorbed this connection. The Jews felt that the 500 year (135-638) ban - which had been fairly strictly enforced - on Jewish entry into and settlement in Jerusalem had come to its end.” [23]

অর্থাৎ, বিজয়ী মুসলিমরা জেরুজালেমের সাথে ইহুদিদের শক্তিশালী বন্ধনের কথা খুব ভালো করেই জানতো। ইহুদিরা অনুভব করছিলো যে (রোমানদের দ্বারা) ৫০০ বছর ব্যপি জেরুজালেমে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার কাল শেষ হতে চলছে।

 

বইটি থেকে সামনের ইতিহাসগুলো পড়লে আমরা লক্ষ্য করবো যে উমার(রা.) এবং মুসলিমদেরকে ইহুদিদের উচ্ছেদকারী কিংবা নিপিড়নকারী বলা তো দূরের কথা, তাদেরকে জেরুজালেমে পুনর্বাসনকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনার ভবিষ্যতবাণী তারা তাদের কিতাবে উল্লেখ পায় বিধায় তারা উমার(রা.) এবং মুসলিমদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে! –-

 

“…Tenth-century Karaite commentators on several occasions note the dramatic impact of the Muslim conquest on Jerusalem. For example, in his commentary on Daniel 11:32. Daniel al Qumisi, writing towards the end of the ninth century, states:

 

Before his arrival for the king of the Ishmaclites, who was victorious over the king of the Negev, [the Byzantine emperor], they [the Jews] could not enter Jerusalem and would therefore come from the four corners of the carth to Tiberias and to Gara in order to catch a glimpse of the Temple. Now that he has arrived, he has brought the Jews to Jerusalem and has provided them with a place, and many of them settled down there. Since then Jews from all over the world come to pray and study in Jerusalem. [24]

অর্থাৎ, দশম শতাব্দীর কারাইট (ইহুদিদের একটি দল) কিতাব ব্যাখ্যাকারকরা মুসলিমদের জেরুজালেম বিজয়ের নাটকীয় বিভিন্ন প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাইবেলের দানিয়েল ১১ : ৩২ এর ব্যাখ্যায় ৯ম শতকের ব্যাখ্যাকারক দানিয়েল আল কুমাইসি লিখেছেন,

“নেগেভের রাজার [অর্থাৎ বাইজানটাইন শাসক] উপর বিজয়ী ইসমাঈল বংশধরদের রাজার [অর্থাৎ খলিফা উমার(রা.)] আগমনের পূর্বে ইহুদিদের জেরুজালেমে ঢুকতে দেয়া হতো না।...তাঁর [উমার(রা.)] সেখানে আগমনের পর তিনি ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে নিয়ে আসেন, তাদেরকে থাকার জায়গা দান করেন। ইহুদিদের অনেকেই সেখানে বসতি গাড়ে। এরপর থেকেই সারা পৃথিবী থেকে ইহুদিরা জেরুজালেমে এসে প্রার্থনা করছে এবং (ধর্মীয় কিতাবাদী) অধ্যায়ন করছে।

 

এখানে খুবই আগ্রহ উদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে – ইহুদিরা রোমানদের উপর মুসলিমদের বিজয়কে তাদের ধর্মগ্রন্থের ভবিষ্যতবাণীর সাথে তুলনা করছে ও মুসলিমদের প্রশংসা করছে। কারণ তারা ভালো করেই মুসলিমদের ন্যায়-ইনসাফের কথা জানতো। তারা জানতো মুসলিমরা শুধুমাত্র তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিতো। তাদের সাথে অন্যায় করতো না। এর প্রতিফলন ইহুদিদের এই লেখাগুলোতেই দেখা যাচ্ছে। ইহুদিরা বহুকাল ধরে রোমানদের দ্বারা তাদের প্রিয় ভূমি জেরুজালেম থেকে বহিষ্কৃত ছিলো। মুসলিমদের দ্বারা তারা পুনরায় সেখানে বসবাস করার অধিকার ফিরে পেয়েছিলো।

 

In the preface to his Book of Precepts, Sahl ben Mazliah writes in a similar vein:

After having left that place, it remained for over five hundred years as rubble and dens for jackals, and the Jews could not enter. The Jews who resided in the east would come to the city of Maziyah (=Tiberias) in order to pray, while those who lived in the west would come to the city of Gaza for that purpose. Those who dwelt in the south would go to the city of Zoar. In the days of the little horn, God opened His gates of mercy to His people, and brought them to His holy city. …

অর্থাৎ, কর্মবিধি বিষয়ক বইয়ের ভূমিকায় সাহল বেন মাজলিয়াহ একইভাবে লিখেছেনঃ

সে জায়গাটি (বাইতুল মুকাদ্দাস) ছেড়ে যাবার পর ৫০০ বছরেরও বেশি সময় সেটি পাথরকুঁচি আর গর্তে পরিপূর্ণ হয়ে ছিল যাতে শেয়াল বসবাস করতো। ইহুদিরা সেখানে ঢুকতে পারতো না। পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী ইহুদিরা মাযিয়াহ (তাবারিয়া) শহরে প্রার্থনার জন্য আসতো। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারীরা আসতো গাজা শহরে। দক্ষিণে বসবাসকারীরা যেতো যোয়ার শহরে। “ছোট শিং এর দিনগুলোতে” [25] ঈশ্বর তাঁর দয়ার দরজা তাঁর লোকদের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং তাদেরকে পবিত্র শহরে ফিরিয়ে এনেছেন। ...

 

We have a similar statement by another contemporary, Salmon ben Yeruhim, in his Arabic commentary on Psalms 30:

It is a well known fact that the Temple Mount was under Roman rule for over 500 years and that they (the Jews) could not enter Jerusalem during that period. Anyone who did enter and whose [Jewish] identity was discovered was put to death. However, with the departure of the Romans, thanks to God's Abundant grace, and with the victory of the Ishmaelite kingdom, the Jews were allowed once more to enter the city and reside therein… [26]

অর্থাৎ, সমসাময়িক আরেকজন ব্যক্তি সালমন বেন ইয়েরুহিম তাঁর সামসঙ্গীত (Psalms) ৩০ নং অধ্যায়ের আরবি ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন,

এটা সবাই জানে যে বাইতুল মুকাদ্দাস প্রায় ৫০০ বছর রোমান শাসনাধীন ছিলো এবং তারা (ইহুদিরা) সে সময়ে জেরুজালেমে ঢুকতে পারতো না। কেউ যদি সেখানে ঢুকতো আর যদি তার [ইহুদি] পরিচয় ফাঁস হয়ে যেতো তাহলে তাকে হত্যা করা হতো। ঈশ্বরের অসামান্য দয়ার জন্য ধন্যবাদ, রোমানদের বিদায় ও ইসমায়েলীয়দের (আরব মুসলিম) রাজত্বের ফলে ইহুদিরা পুনরায় সে শহরে প্রবেশ করার ও বসবাস করার অনুমতি পেলো। ...

 

The Karaite commentators thus confirm what we already know from Christian sources that the Jews were forbidden to enter Jerusalem - and they specifically state that it was the Muslims who brought about a change when they conquered Jerusalem. In the Secrets of Rabbi Shimon bar Yohy we read: "The second king of the Ishmaelites [that is, Umar b. al. Khattab] will be a friend to the people of Israel, will mend their broken walls and will repair the walls of the Temple." One Jewish chronicle, a portion of which survived among the documents of the geniza, supports the view that it was 'Umar who gave the Jews permission to resettle in Jerusalem and that, in the wake of that decision, seventy Jewish families moved from Tiberias to Jerusalem. [27]

অর্থাৎ, কারাইট (ইহুদিদের একটি দল) কিতাব ব্যাখ্যাকারকেরা খ্রিষ্টান সূত্রগুলোর তথ্যকেই সমর্থন করেছেন যা আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। ইহুদিদের জন্য জেরুজালেমে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। তারা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, জেরুজালেম জয় করার পরে মুসলিমরাই এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায়। “Secrets of Rabbi Shimon bar Yohy”তে উল্লেখ আছে, “ইসমায়েলীয়দের ২য় রাজা [অর্থাৎ উমার বিন খাত্তাব(রা.)] ইস্রায়েলীয়দের বন্ধু হয়ে থাকবেন। তিনি তাদের ভাঙা দেয়ালগুলো মেরামত করবেন এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের দেয়ালগুলো সংস্কার করবেন।” গেনিজায় প্রাপ্ত নথিপত্রের মধ্যে প্রাপ্ত একটি ইহুদি ঘটনাপঞ্জি এ তথ্যকেই সমর্থন করে। সেখানে বলা হয়েছে যে উমার(রা.) ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে পুনরায় বসবাসের অনুমতি দেন। অনুমতি পাওয়ামাত্র ৭০টি ইহুদি পরিবার তাবারিয়া (শামের একটি অঞ্চল) থেকে জেরুজালেমে চলে আসে।

 

ইসলামবিরোধীরা বলতে চায় যে মুসলিমরা নাকি ইহুদিদেরকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদকারী ও নির্যাতনকারী। অথচ খোদ প্রাচীন ইহুদিরা উমার(রা.)কে “ইস্রায়েলীয়দের বন্ধু” বলে উল্লেখ করেছে। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাঁর ব্যাপারে সমকালীন ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গী কীরূপ ছিলো। তাঁর দ্বারা যদি আসলেই ইহুদিদেরকে অন্যায়ভাবে আরব উপদ্বীপ থেকে বিতারণ বা তাদের উদ্বাস্তু বানানোর ঘটনা ঘটতো তাহলে প্রাচীন ইহুদিদের লেখনীতে এমন কিছু পাওয়া যেতো না। ইহুদিদের কেউ কেউ নিজেদের চুক্তিভঙ্গের কারণে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলো। কিন্তু তাদেরকে খালি হাতে বের করে দেয়া হয়নি, তাদের সম্পদের দাম পরিশোধ করে এরপর তাদেরকে যেতে দেয়া হয়েছে। এর কিছুকাল পরে তারা তাদের প্রিয় ধর্মীয় ভূমিতে বসবাস করার সুযোগ পেলো যেখানে তাদের প্রায় ৫০০ বছর প্রবেশ নিষেধ ছিলো। মদীনা ইহুদি ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় কেন্দ্র নয়। অপরদিকে জেরুজালেম ইহুদিদের নিকট ধর্মীয় কেন্দ্র এবং পরম আকাঙ্খিত ভূমি। মদীনা থেকে বহিষ্কার হয়ে জেরুজালেমে পুনর্বাসন লাভ – ইহুদি ধর্মালম্বীদের কাছে এ যেন ১০০ টাকা হারিয়ে ৫০০ টাকা প্রাপ্তির মতো ব্যাপার!

 

 In a letter sent in the middle of the eleventh century from the Jerusalem Yeshiva to Jewish communities in the Diaspora (apparently, Egypt) we read the following passage :

It was thanks to God, who turned toward us the compassion of the Ishmaelite kingdom, that it stretched out its hand and captured the Holy Land from the Edomites and came to Jerusalem. With the Ishmaelites were Jews, who showed them the site of the Temple and have remained with them in Jerusalem from that time to this very day.. [28]

অর্থাৎ, Jerusalem Yeshiva থেকে, একাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে [মিসরে] ছড়িয়ে থাকা ইহুদি সম্প্রদায়ের নিকট পাঠানো এক চিঠিতে এই কথাগুলো লেখা হয়েছেঃ

“ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যিনি ইসমায়েলীয় রাজত্বের [ইহুদি লেখক এ দ্বারা ইসলামি খিলাফতকে বুঝিয়েছে] দয়া-মায়াকে  আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা পবিত্র ভূমি (ফিলিস্তিন)কে এদোমিয়দের থেকে জয় করেছে এবং জেরুজালেমে এসেছে। ইসমায়েলীয়দের (আরব মুসলিম) সাথে ইহুদিরা ছিলো, যারা তাদেরকে বাইতুল মুকাদ্দাসের স্থানটি দেখিয়ে দিয়েছিলো। আর তারা তখন থেকে আজ পর্যন্ত তাদের সাথেই জেরুজালেমে আছে। ”

 

 These last sources also corroborate a point that is found in works of Karaite commentators, namely that Jewish resettlement in Jerusalem began immediately upon its conquest. These sources support an additional piece of information that appears in traditional Muslim accounts, that the Jews participated in the removal of refuse from the Temple Mount, some of them being invested with the responsibility of keeping the area clean. According to the historical sources, the Jews also played a role in discovering the location of the Rock, as we can see in a section of the Yeshiva letter quoted above, and from a Jewish chronicle, [29]

অর্থাৎ শেষ সূত্রগুলো একটি বিষয়কে প্রমাণ করে যা কারাইট কিতাব ব্যাখ্যাকারকদের লেখার মধ্যে পাওয়া যায়। আর তা হলো, জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপন [মুসলিমদের] ঐ অঞ্চল বিজয়ের পরপরই শুরু হয়ে যায়। এই সূত্রগুলো আরো কিছু আনুষঙ্গিক তথ্যকে সমর্থন করে যা মুসলিম সূত্রগুলোতেও পাওয়া যায়। আর তা হলোঃ ইহুদিরা বাইতুল মুকাদ্দাসের আবর্জনা পরিষ্কার করায় অংশ নিয়েছিলো। তাদের কাউকে কাউকে ঐ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পর্যন্ত দেয়া হয়। ঐতিহাসিক সূত্রগুলো তথ্যমতে, ইহুদিরা পাথরের [ইয়াকুব(আ.) এর পাথর বা Foundation stone] অবস্থান নির্ণয়ে ভূমিকা রেখেছিলো। যা আমরা উপরে উল্লেখিত Yeshiva চিঠি এবং একটি ইহুদি ঘটনাপঞ্জিতে দেখি।

 

আমরা ইহুদিদের লিখিত ঘটনাপঞ্জি ও ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যাগুলো থেকে মুসলিমদের জেরুজালেম বিজয় ও ইহুদিদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে আরো কিছু তথ্য দেখলাম। সব জায়গাতেই মুসলিমদের ভূমিকার প্রশংসা ও এ জন্য ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উল্লেখ।

যে মুসলিমরা ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিলো আজ সেই মুসলিমদেরকেই ফিলিস্তিনছাড়া করছে ইহুদিরা। ইসলামের ইনসাফের বিপরীতে তাদের আচরণের পার্থক্য মোটা দাগেই আলাদা করা যায়।

 

আরব উপদ্বীপ থেকে খ্রিষ্টানদের বহিষ্কার

 

বহিষ্কারের কারণ

 

আরব উপদ্বীপে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ইহুদিদের তুলনায় বেশ কম ছিলো। নাজরানের খ্রিষ্টানদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে একটি বিবরণ পাওয়া যায়। এই বহিষ্কারের পেছনেও চুক্তিভঙ্গের ব্যাপার জড়িত ছিলো। ইমাম আবু ইউসুফ(র.) বলেন, উমার(রা.) মুসলিমদের ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের ভয় করতেন। [30] ইসলামী রাষ্ট্রে সুদী কারবার নিষিদ্ধ। নাজরানের খ্রিষ্টানরা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর সাথে যে চুক্তি করেছিল এবং আবু বকর(রা.) এর শাসনামলে সেটার নবায়ন করেছিল - সেটা তারা পূরণ করেনি। তারা বিভিন্ন শর্তের বিপরীতে গিয়ে সুদের কায়কারবার চালাচ্ছিলো। এমতাবস্থায় উমার(রা.), তাদেরকে নাজরান থেকে ইরাকে পাঠিয়ে দেন। [31]

 

বহিষ্কারকরণের প্রক্রিয়াঃ খ্রিষ্টানদেরকে কি অসহায়-উদ্বাস্তু বানিয়ে বিতাড়ন করা হয়?

 

উমার(রা.) ইরাকের প্রশাসককে লিখিতভাবে সেই খ্রিষ্টানদেরকে জমি প্রদান করার নির্দেশ দেন। যার ফলে তারা সেগুলোকে চাষ উপযোগী করতে পারে ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। তিনি সেখানকার প্রশাসকের কাছে এই মর্মে চিঠি পাঠান – “সিরিয়া ও ইরাকের যেসব আমিরদের কাছে এরা যাবে, তারা যেন তাদেরকে বন্ধকী জায়গা প্রদান করে। এরা সেগুলোকে ফসল ফলনের উপযোগী করতে পারলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার মালিকানা তাদের দেওয়া হবে।” সেই মতে তারা ইরাক আসে। কুফায় নাজরানিয়া নামীয় একটি গ্রামে আবাস গাড়ে। [32] খ্রিষ্টানদেরকে বাস্তুহারা-পথের ভিক্ষুক বানিয়ে বিতাড়ন তো দূরের কথা বরং তাদের জন্য জমি-জমা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

 

আমরা পুরো আলোচনার সারাংশ হিসেবে বলতে পারি—

 

১। আরব উপদ্বীপ হচ্ছে ইসলামের কেন্দ্র ও ওহী নাজিলের স্থান। ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের দ্বারা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছিলো। তাদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কারের প্রেক্ষাপট ছিলো এটি।

২। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর বক্তব্যের সাথে সাথেই তাদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাদের কিছু দলকে তখনই বহিষ্কার করা হয়েছে যখন তারা মুসলিমদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছে।

৩। যেসব ইহুদি-খ্রিষ্টান চুক্তি ভঙ্গ করেনি, তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়নি। তবে নতুন করে কোনো অমুসলিমকে আরব উপদ্বীপে স্থায়ী বসবাসেরও অনুমতি দেয়া হয়নি।

৪। ইহুদিদেরকে বহিষ্কারের সময়ে তাদের সম্পদের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছিলো। তারা মোটেও সহায় সম্পদহীন বা উদ্বাস্তু হয়ে যায়নি। মুসলিমদের দ্বারা তারা তাদের ধর্মীয় কেন্দ্র জেরুজালেমে বসবাসের অনুমতি পায় যেখানে রোমানরা প্রায় ৫০০ বছর ধরে তাদেরকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিলো।

৫। চুক্তি ভঙ্গকারী বহিষ্কৃত খ্রিষ্টানদেরকে জমির ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তারাও নিঃস্ব বা উদ্বাস্তু হয়নি।

 

পরিশেষে যা বলবো— ইসলামে মুসলিম বা অমুসলিম কারো উপরেই জুলুম করা বৈধ নয়। যদিও নাস্তিক-মুক্তমনা ও খ্রিষ্টান মিশনারীরা ইসলামের বিরুদ্ধে বারংবার এই অভিযোগ আনতে চায়। ৭ম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে চুক্তি ভঙ্গকারী বহিষ্কৃত ইহুদি-খ্রিষ্টানদের উপরেও ইসলাম যে ন্যায়-ইনসাফ করেছে, সেটি তাদের চোখ এড়িয়ে গেলেও নির্মোহ বিশ্লেষকদের চোখ এড়ানো সম্ভব নয়।

 

يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنوا كونوا قَوّامينَ لِلَّهِ شُهَداءَ بِالقِسطِ ۖ وَلا يَجرِمَنَّكُم شَنَآنُ قَومٍ عَلىٰ أَلّا تَعدِلُوا ۚ اعدِلوا هُوَ أَقرَبُ لِلتَّقوىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبيرٌ بِما تَعمَلونَ

অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার করো— এটাই পরহেজগারীর অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত [33]

 

আবূ যর গিফারী(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল(ﷺ) ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

يَا عِبَادِيْ! إِنِّيْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِيْ وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَـمُوْا

অর্থঃ ‘‘হে আমার বান্দারা, নিশ্চয়ই আমি আমার উপর যুলুম হারাম করে দিয়েছি অতএব তোমাদের উপরও তা হারাম। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না’’। [34]

 

আনাস বিন মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন:

اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ وَإِنْ كَانَ كَافِرًا فَإِنَّهُ لَيْسَ دُونَهَا حِجَابٌ

অর্থঃ “তোমরা মজলুমের বদদুআ থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফির হয়। কেননা মজলুমের দুআ কবুল হওয়ার কোনো অন্তরায় নেই।” [35]

 

হিশাম বিন্ ’হাকীম(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল(ﷺ) বলেন:

 إِنَّ اللهَ يُعَذِّبُ الَّذِيْنَ يُعَذِّبُوْنَ النَّاسَ فِيْ الدُّنْيَا.

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ওদেরকে শাস্তি দেবেন যারা দুনিয়াতে মানুষকে (অন্যায়ভাবে) শাস্তি দেয়’’। [36]

 

আবূ বাকরাহ্(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল(ﷺ) বলেন:

مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُّعَجِّلَ اللهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوْبَةَ فِيْ الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِيْ الْآخِرَةِ مِنَ الْبَغْيِ وَقَطِيْعَةِ الرَّحِمِ.

অর্থঃ দু’টি গুনাহ্ ছাড়া এমন কোন গুনাহ্ নেই যে গুনাহগারের শাস্তি আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়াতেই দেবেন এবং তা দেওয়াই উচিৎ; উপরন্তু তার জন্য আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। গুনাহ্ দু’টি হচ্ছেঃ অত্যাচার তথা কারোর উপর অন্যায়মূলক আক্রমণ এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী’’। [37]

 

এ ব্যাপারে এই আলোচনাগুলোও দেখা যেতে পারেঃ

 

নবী(স) আরব উপদ্বীপ থেকে মুসলিম বাদে অন্য সকল ধর্মের লোকদেরকে কেন বের করে দিয়েছিলেন_শায়খ ড.সাইফুল্লাহ

https://youtu.be/pqZk3cWYLo4

 

 

নবী(স.) কেন ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে দিতে বলেছেন?_শায়খ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

https://youtu.be/OmnV1rsS2-s

 

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1] জামি তিরমিজি , হাদিস নং : ১৬০৬ (সহীহ)

[2] বুখারী ৪৩৬, ৪৩৭, মুসলিম ৫২৯, মুয়াত্তা ১৫৯২;

 ইমাম মুসলিম হাদীসটি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল

[3]তাবারী; কুরআনুল কারীম বঙ্গানুবাদ ও তাফসির – ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, ১ম খণ্ড, সুরা তাওবার ১০৭ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ১০১৭-১০১৮

তাফসির ইবন কাসির, ৫ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা তাওবার ১০৭ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৪২-৪৭

সীরাতুন নবী(সা)—ইবন হিশাম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮১-২৮২

[4] আর রাহিকুল মাখতুম—শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) পৃষ্ঠা ২৩৬-২৩৭

[5]সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৪৯০; তাফসির ইবন কাসির, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা আলি ইমরানের ৭৭ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৫২৩

■ “When al-Ash‘ath ibn Qays and a Jewish man referred a dispute to the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) concerning some land in Yemen, and ‘Abdullah did not have any proof, the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) ruled that the land belonged to the Jew, on the basis of his oath”

The Prophet’s interactions with the Jews_IslamQA – Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid

https://islamqa.info/en/84308/

[6] আর রাহিকুল মাখতুম—শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) পৃষ্ঠা ২৮১-২৮৩

[7] সিরাত ইবন হিশাম ৩/৬৮২

[8] সিরাত ইবন হিশাম ৩/৭০৬

[9]  “... ...Finally, when the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) saw the betrayal and treachery of the Jews, Allah revealed to him that the Arabian peninsula should be exclusively for the religion of pure monotheism, and no religion should be left in it except the religion that Allah had chosen.”

“The Prophet’s interactions with the Jews” – IslamQA – Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid

https://islamqa.info/en/84308/

[10]কিতাবুল খারাজ – ইমাম আবু ইউসুফ(র.), পৃষ্ঠা ১২৬ 

আল আমওয়াল –আবু উবায়দ, পৃষ্ঠা ৫৭

বিশ্বশান্তি ও ইসলাম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) - সাইয়িদ কুতুব শহীদ, পৃষ্ঠা ১৭৭-১৭৮

[11] তিরমিজি, আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ—ইমাম বুখারী(র.), হাদিস নং : ১০৪ (সহীহ)

[12]নিজামুল হাকাম ফিশ শারিয়াতি ওয়াত তারিখিল ইসলামি : ১/৫৮

আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, অনুবাদঃ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক (কালান্তর প্রকাশনী), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩০

■ অনুরূপ আরো একটি বর্ণনা রয়েছে। -

ইবন আবি হাতিম(র) এর নিকট সহীহ সনদে বর্ণিত; আসলাম বর্ণনা করেছেন, আমি ছিলাম উমার বিন খাত্তাব (রা.) এর খ্রিষ্টান দাস। তিনি আমার নিকট ইসলাম পেশ করলেন। কিন্তু আমি অস্বীকৃতি জানালে তখন তিনি বললেন, “ধর্মে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।” ... "

[ফাতহুল হামিদ ফি শারহিত তাওহিদ - উসমান বিন আব্দুল আযিয আত তামিমি, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৬০৪]

https://www.noor-book.com/كتاب-فتح-الحميد-في-شرح-التوحيد-pdf

[13] আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, অনুবাদঃ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক (কালান্তর প্রকাশনী), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৬

[14] আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, অনুবাদঃ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক (কালান্তর প্রকাশনী), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৩

[15]সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৭৩০

আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, অনুবাদঃ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক (কালান্তর প্রকাশনী), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৬

[16] আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, অনুবাদঃ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক (কালান্তর প্রকাশনী), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৬

[17] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া—ইবন কাসির (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৭

[18] আর রাহিকুল মাখতুম—শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৪

[19] ■ “Ancient Jewish History: The Diaspora - Jewish Virtual Library”

https://www.jewishvirtuallibrary.org/the-diaspora

■ Diaspora - Encyclopædia Britannica

https://www.britannica.com/topic/Diaspora-Judaism

[20] ■ “হে জেরুজালেম, যদি আমি তোমাকে ভুলে যাই তবে আমার ডান হাত যেন অকেজো হয়ে যায়। যদি আমি তোমাকে মনে না রাখি, যদি জেরুজালেমকে আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দের জিনিস বলে মনে না করি, তবে আমার জিভ্‌ যেন আমার তালুতে লেগে যায়।”

[খ্রিষ্টান বাইবেল/ইহুদি তানাখ, সামসঙ্গীত (Psalms/Tehillim) ১৩৭ : ৫-৬]

■ “The Jewish Connection to Jerusalem _ My Jewish Learning”

https://www.myjewishlearning.com/article/the-jewish-connection-to-jerusalem/

[21] ■ “Menashe Harel - Ariel Center for Policy Research (ACPR)”

http://www.acpr.org.il/ENGLISH-NATIV/authors/harel-m.htm

■ “Harel, Menashe _ Encyclopedia.com”

https://www.encyclopedia.com/religion/encyclopedias-almanacs-transcripts-and-maps/harel-menashe

[22] Golden Jerusalem By Menashe Har-El, Page 34

[23] The History of Jerusalem: The Early Muslim Period (638-1099) edited by Joshua Prawer, Haggai Ben-Shammai, Page 165

[24] The History of Jerusalem: The Early Muslim Period (638-1099) edited by Joshua Prawer, Haggai Ben-Shammai, Page 165-166

[25] বাইবেলের দানিয়েল (Daniel) ৭ম অধ্যায়ে উল্লেখিত অত্যাচারী সাম্রাজ্যের কাল

[26] The History of Jerusalem: The Early Muslim Period (638-1099) edited by Joshua Prawer, Haggai Ben-Shammai, Page 166

[27] The History of Jerusalem: The Early Muslim Period (638-1099) edited by Joshua Prawer, Haggai Ben-Shammai, Page 167

[28]

[29]

[30] কিতাবুল খারাজ— ইমাম আবু ইউসুফ(র.), পৃষ্ঠা ৭৯

[31] আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, অনুবাদঃ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক (কালান্তর প্রকাশনী), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৬

[32]

[33] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ৮

[34] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৭৭

[35] মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ১২১৪০, সহীহ

[36] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৬১৩

[37] আবু দাউদ ৪৯০২; তিরমিজি ২৫১১; ইবন মাজাহ্ ৪২৮৬; ইবন হিব্বান ৪৫৫, ৪৫৬ বাযযার, হাদিস ৩৬৯৩; মুসনাদ আহমাদ ২০৩৯০, ২০৩৯৬, ২০৪১৪