Pray for the world economy

ইসলাম কি দত্তক নেয়াকে নিষিদ্ধ করে?

 

দত্তক(adoption) নেয়া নিশ্চয়ই একটি মানবীয় গুণ। সন্তান না হওয়া সত্ত্বেও আজীবন কাউকে সন্তানের মত পালন করতে হলে অবশ্যই অনেক বিশান হৃদয়ের অধিকারী হতে হয়। তবে দত্তক প্রধানত দুই প্রকারের হতে পারেঃ

 

  1. কাউকে নিজের সন্তান হিসেবে দত্তক নেয়া। সেক্ষেত্রে, শিশুটি পিতা-মাতার পরিচয় হিসেবে যে ঘরে প্রতিপালিত হচ্ছে, সে ঘরের পরিচয় গ্রহণ করে।
  2. আরেক প্রকারের দত্তক হচ্ছে, কাউকে প্রতিপালন করা কিন্তু শিশুটি যে ঘরে প্রতিপালিত হচ্ছে তাদের পরিচয় গ্রহণ করে না।

 

অনেকে ধারণা করে থাকেন ইসলামে দত্তক নেয়া হারাম। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামে কেবল প্রথম প্রকারের দত্তককেই হারাম করেছে, দ্বিতীয় প্রকারের দত্তক ইসলামে সম্পূর্ণ বৈধ [1] । আল্লাহ প্রথম প্রকারের দত্তক সম্পর্কে বলেন-

 

““আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।[2]  

 

আল্লাহ খুব সুন্দরভাবে আমাদের উপমা দিয়ে বোঝাচ্ছেন; যেভাবে মানুষের মধ্যে দুইটা মন থাকতে পারে না, ঠিক একইভাবে একটি ছেলের দুইটি পিতা হওয়া অসম্ভব। এটা আমাদের মুখের কথা মাত্র এবং আমাদের মনের সাথে তার কোন সংযোগ নেই। তেমনিভাবে, যদি নিজেদের স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করি(যিহার), তবে তারা আমাদের মা হয়ে যায় না, স্ত্রীই থাকে। [3]

 

তাই আল্লাহতায়ালা কারো পিতৃ-পরিচয় জানা থাকলে তাকে তার পিতৃপরিচয়েই ডাকার নির্দেশ দিয়েছেনঃ

 

তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[4]  

 

অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, পিতার পরিচয় বহন করলে এমন কি সমস্যা? প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, ইসলাম স্পেডকে স্পেড বলে। তাই সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, পিতার পরিচয় বহন করলেই কেউ পিতা হয়ে যায় না। এ কারণে একই ঘরে প্রতিপালিত হলেও যে ছেলে কিংবা মেয়েকে দত্তক নেয়া হয়েছে তার অভিভাবকের যদি কোন সন্তান থাকে তবে সে তাদের ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে না। এক্ষেত্রে, বিপরীত লিঙ্গের হলে তারা গায়রে মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ) বলে সাব্যস্ত হবে।

 

তবে, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে, যদি কোন মহিলা কোন শিশুকে প্রথম দুই বছরের মধ্যে পাঁচ বা তার বেশীবার বুকের দুধ পান করান, তবে সে তার সন্তানের ভাই-বোন বলে গণ্য হবে [5]। আল্লাহ বলেন -

 

তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন।” [6]

 

পাশ্চত্যের ফোস্টার প্যারেন্টিং সিস্টেম দেখে অনেকে ইসলামের এই বিধানটাকে বাড়াবাড়ি বলতে চান।যদিও তারা মুদ্রার অপর পিঠটা কখনোই বলেন না। পরিসংখ্যান অনুসারে, খোদ যুক্তরাজ্যেই প্রতি বছর ২০০০-২৫০০ অভিযোগ পাওয়া যায় ফোস্টার অভিভাবকদের বিরুদ্ধে যারা কিনা তাদের দত্তককৃত শিশুদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। লাঞ্ছিত শিশুদের মধ্যে ৬০ ভাগ মেয়ে আর তাদের গড় বয়স মাত্র নয়! [7]  

 

যারা ঢালাওভাবে “ইসলামে দত্তক প্রথা নেই” এই কথা বলতে চান, তারা অবশ্যই ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেন। কারণ, আমি দ্বিতীয় প্রকারের যে দত্তকের কথা বলেছি, তাতে ইসলামী শরীয়াতে কোন বাঁধা নেই। বরং আশা করা যায়, যারা কোন অসহায় শিশুর আশ্রয়দাতা হবেন, আল্লাহতায়ালা তাদের পরকালে উত্তম প্রতিদান দিবেন।

 

আর আল্লাহতায়ালাই তো সর্বোত্তম পুরষ্কারদাতা।

 

এ প্রসঙ্গে আরো দেখা যেতে পারে –

“পালক সন্তান নেয়া কি ইসলামে হারাম?” – শায়খ আহমাদুল্লাহ

https://youtu.be/Ht9qSeNFbYg

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1] IslamQA-Adoption is of two types – forbidden and prescribed :

https://islamqa.info/en/10010

[2] আল কুরআন; সূরা আল আহযাব, আয়াতঃ৪

[3] তাফসীর ইবনে কাসির, ১৫ নং খন্ড, পৃষ্ঠা-৭৩৬

[4] আল কুরআন; সূরা আল আহযাব, আয়াতঃ ৫

[5] IslamQA-He found a baby and adopted him – what is the ruling?-

 https://islamqa.info/en/33020

[6] আল কুরআন;সূরা আন-নিসা- আয়াতঃ২৩

[7] Major study reveals true scale of abuse of children living in care-

http://www.independent.co.uk/news/uk/crime/major-study-reveals-true-scale-of-abuse-of-children-living-in-care-9587244.html